Thursday, September 13, 2018


নন্দিনী, পৃথিবীর কিছু মানুষকে দেখে—
এই পৃথিবীর কিছু মানুষের দিকে চেয়ে ক্লান্ত আমি
অকারণে তারা রক্ত-ঘাম মেখেছে শরীরে
নেই কোনো শুভসংকেত।
পথ নেই পালাবার, বোধিসত্তা নেই চেতনায়
কোথাও একফোঁটা তৃষ্ণার জল নেই
পরপারে কুঁড়েঘরের স্বপ্নটাও ভেঙেছে।
ঠাঁই পাব বলে যার কাছে ছুটে যাই
সেও বলে চলে যাও দূরে, পরের ঘরে আমি।
নন্দিনী,
বিকেল হয়ে সন্ধ্যা নামার অপেক্ষায় থাকতাম আমরা
পাশের নারকেল পাতায় এসে বসত জোড়া পেঁচা,
সবুজ খেতের মতো চাঁদনী আকাশ তখন মায়াবতী হতো
বাতাসে ভেসে আসত গভীর রাতের বেহাগি সুর।
শুয়ে তুমি আমার হাঁটুর ওপর—
চেয়ে থাকতে রহস্যময় শব্দের দিকে
তোমার বুকে তখন রঙিন ফুলঝুরি
তোমার ঠোঁটে তখন দুষ্ট হাসির মাতলামি।
নন্দিনী,
সেই সন্ধ্যাগুলো আমাদের খুব কাছের ছিল
সেই পালতোলা বাতাসে পেখম ছোটা নিশিপাখি—
তোমার গন্ধ শুঁকে মাতাল হতো।
কত শঙ্খচূড়, মধুমালাদের গল্প কাহিনী হয়ে গেলে—
তুমি ছুটে এসে বুকে টেনে নিতে গভীর আদরে।
নন্দিনী,
এখন তুমি অনেক দূরের।
পরের আঙিনায় পিঁড়ি পেতে বসে থাকো—
সকালের তানপুরার দিকে চেয়ে—
কেবল নিজেকেই ভালোবাসার কথা বলো।
আমি কোন দিকে যাব?
তুমি আছ অচিন দেশে, আমি এলোমেলো পথে
আমাদের সুন্দর সময় গিয়েছে চলে?
রোদহীন সকাল ও আলোময় সন্ধ্যা আর নেই—
কাতর পরশ ভুলেছ তুমি? হায়—
মানুষ খুঁজে পাই না আর সমুদ্র তীরেও।

কবিতা-২
নন্দিনী, কবিতা কীভাবে লেখে বলো?
নন্দিনী,
আর লিখতে ইচ্ছে করছে না কবিতা।
আজ তুমি-আমি এক বুক নেমেছি জলে
কেটেছি অসীম সাঁতার।
আজ তুমি-আমি খোলা মাঠে হেঁটেছি সাগর।
নন্দিনী,
আজ তুমি বুকে নিলে
আজ তুমি শেখালে ভীষণ,
ঢেউ ছেড়ে নেমে অতলে
ভরে দিলে আনন্দ ললন।
নন্দিনী,
জানি ‘আমি-তুমি’ দুজনে
দিনটি বিলসন আমাদের কুজনে।
তবু দিলে তুমি হতাশার দোলা,
খুনসুটি ভরা এ কোন খেলা?
তুমি জানো, আমি জানি—পথ চলি তোমারই তটে
জল ঢালি খোলা সেই তোমারই কপাটে।
আমি আর কিছু নই তুমি ছাড়া জীবনে।
নন্দিনী,
ভালোবেসে মিটল না সাধ এ ভুবনে—
বাঁকা স্রোতে হেঁটে আমি জেনেছি এ বাণী মিছে—
সুখ নিয়ে ছুটছি তাই তোমারই পিছে।

কবিতা-৩
লিখছি না কবিতা অনেক দিন
পৃথিবী উজাড় করব বলে ধরেছি পণ।
হিটলারি শাসনে দেব সব জলাঞ্জলি
না মনে রাখ আমাকে আর যদি।

কবিতা-৪
নন্দিনী, পৃথিবীতে কে কার?
নন্দিনী, তোমার শাসনবারণ আজ চৈতালি মাঠ—
জীবন এ রকমই—হয়তো তাই,
পরদেশে রহস্য কুয়াশা তোমার?
আর বিনাশের জালে বন্দি আমি চৌরঙ্গী জল।
নন্দিনী,
কখন শুনব শাসনবারণ সেই?
কখন বলবে তোমার বয়স কমছে?
নিজেকে ভাবছ ২৫?
কখন বলবে, ফেসবুকে লাইক দিচ্ছ আজেবাজে।
কী সব রুচি?
অভিযোগ করবে—আর লিখবে না ওই শব্দ ‘কিল দেম’।
কথা শোন—জঙ্গি নিয়ে লিখবে না—করছি কত নিষেধ।
কী সব শেয়ার দাও?
ট্রাম্পের টুইট কেন ওয়ালে তোমার?
ভাবছ এটাই তোমাকে দেবে বিদেশ-ছুটি?
নন্দিনী,
তুমি হয়তো বলছ—এত বড়লোকি কেন ভবঘুরে?
ক্রেডিট কার্ড কত হলো? খুব ভালো লাগে ঋণ?
বাঁকিয়ে গ্রীবা শুনিয়ে দিলে—আচ্ছা তুমি এসব কি ছাইপাশ গেল?
খাবে না বাইরের জিনিস। আমি দেবো আদর।
নন্দিনী,
শাসনবারণ আর কত কথা ছিল তোমার!
তুমি বলতে—কেবল তোমার আমি।
আর কাউকে দেবে না ভাগ কখনো।
অথচ সেই তুমি এখন চাঁদনী প্রাচীরে—
তারাবাতির নৌকোতে দুলছ দুজনে।
নন্দিনী,
পেয়েছিলে টের আমার স্বভাব যখন—
বেশ বলতে—গাছের মগডালে উঠে লাফ-স্বপ্ন আর কী!
বলতে—সবুজ জলে ডুব দিয়ে ঘুমাও—
ফালতু কথা বলো না, তুমি বড্ড বাকুমবাকুম।
তোমার প্রিয় শব্দ ‘ফালতু কথা’ আর শুনি না।
তোমার প্রিয় ধমক ‘ফোন রাখবে না বলছি’। ‘তারপর’?
মনে পড়ে সবই খুব নন্দিনী।

নন্দিনী,
অঢেল হাওয়ার বৃষ্টি ভেজা দিনগুলি সেই—
সন্ধ্যায় রিকশায় চলে যাওয়া দূরের প্রহরটুকু
আর মখমলের রঙিন ছোঁয়ায় নেচে ওঠা ঠোঁট—
সব কি এখনো ঠিক তেমন? তুমি বলো—পৃথিবীতে কে কার?

কবিতা-৫
নন্দিনী, পৃথিবী সুন্দর, জীবন কি জটিল?
ভোরের স্বপ্ন ভেঙে জেগেছে তোমার বিষণ্ণ ভিটা,
জেনেছ সুন্দর এ জগৎ রেশম কাতর ছায়া—
মেঘ যেন দুলছে পাহাড় এড়িয়ে নদীর ডানা।
বাতাসে আছে এখনো রাতের বেগুনি ছটা।
নন্দিনী,
উঠেছ প্রেমের সুধা নিতে, হাতে শান্ত বকুলমালা
ভেবেছ দূরদেশে নিয়ে যাবে জীবনের সুবাসিত জ্বালা।
কান্নাভেজা ঠোঁটে তোমার লেগেছে নিঝুম ঘুমের সুর
রুপালি চোখে তোমার এ কেমন মুনিয়া পাখির ঘোর।
নন্দিনী,
আছি দাঁড়িয়ে দুয়ারে তোমার ভোরের স্বপ্ন গুনে
সেই তো তোমার দুপুর-রাতের অনাদি চাষের মাঠে
ঘুরছি কেবল ভালোবাসার প্রহর প্রলয় স্নানে
হাঁটছি কেবল অদৃশ্য এক বৃষ্টি ভেজা শূন্য ঘাটে।
নন্দিনী,
ক্লান্ত তুমি? বিচ্ছেদ কাতর? কথা দিলাম—
আমরা দুজন পার হবো যোজন যোজন রেখা—
পাহাড় আর আকাশের রোদ-ঢেউ-প্লাবনমাখা—
উঁজিয়ে চলা সারা দিনের মাড়িয়ে বুনোপাতা—
পথই এখন তোমার-আমার প্রেমের অনল পাখা
উড়ব দুজন স্বপ্ন মুড়ে—গভীর গভীর শিকল বাঁধন চলা।